Friday, July 20, 2018

নরসিংদীর শিবুপরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস লেগুনার সংঘর্ষ, নিহত ৫ আহত ১০

নরসিংদীর শিবুপরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে
বাস লেগুনার সংঘর্ষ, নিহত ৫ আহত ১০


তৌহিদুর রহমানঃ নরসিংদী মিবপুওে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহি লেগুনার মুখোমুখি সংর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০ জন । এর মধ্যে ৫ জন কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। নিহতরা হলো, রায়পুরা উপজেলার রামনগর এলাকার মুনসুর বেগমের স্ত্রী হাসিনা (৩২), একই এলাকার জান্নাত (১৮) ও লেগুনার চালক মাসুম (১৮), অজ্ঞাত ২ জন। । 
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি আয়োজিত বনভোজনে অংশ নেয়া শেষে বাড়ি রিজার্ভকৃত লেগুনা (ঢাকা মেট্রো-গ ১১ ৮৩৩৪) যোগে রায়পুরায় ফিরছিলেন তারা। লেগুনাটি ঢাকা-সিলেট সহাসড়কের গাংপাড় নামক স্থানে পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা এনা পরিবহনের যাত্রীবাহি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪ ৯৬৫৮) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় লেগুনাটির চালক। আশেপাশের লোকজন  ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা ও সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলা হাসপাতালে ২ জন ও সদর হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দূর্ঘটনাকবলিত বাস ও লেগুনা ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের ফাড়িতে আটক রয়েছে।


#
নরসিংদী
২০/৭/১৮ ইং  

Wednesday, July 11, 2018

চাচাত ভাইয়ের টাকার লোভে জয়নাল মাষ্টার এর পরিকল্পনায় শিশু মামুন কে অপহরন ও হত্যা

নরসিংদী পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন
চাচাত ভাইয়ের টাকার লোভে জয়নাল মাষ্টার এর
পরিকল্পনায় শিশু মামুন কে অপহরন ও হত্যা



তৌহিদুর রহমান: টাকা আদায় করার জন্য রায়পুরার হাসিমপুরের জয়নাল মাষ্টার প্রতিবেশী চাচাত ভাইয়ের ৭ বছরের ছেলে কে  অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দায়িত্ব দেয়া হয় তার দুই নাতী জিহাদ ও লিমন কে । তারা দুইজন এ কাজে সহযোগীতা করার জন্য ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করে নাসির নামের তাদের এক বন্ধুর সাথে। তারপর শিশু নাসির কে অপহরণের পর শ্বাষরোধ করে হত্যা করে লাশ জয়নাল মাষ্টারের বাড়ির ছাদে ফেলে রাখে। আজ বুধবার নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। সংবাদ সম্মেলনে নিহত শিশুর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২০ জুন রায়পুরার হাসিমপুর
এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে নিখোজ হয় ৭ বছরের মামুন। তার সন্ধানে আশেপাশে খোজা-খুজি ও মাইকিং করা হয়। তারপরও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা। এর মধ্যে মামুনের পিতার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন করে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ এর বিনিময়ে মামুন কে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন দিয়ে মুক্তিপণের টাকার জন্য তাগাদা দেয়া হয়। তবে শিশু মামুনের বাবা-মা টাকা দিতে পারেনি। ঘটনার ৩ দিন পর ঘর ঘেষা প্রতিবেশী জয়নাল মাস্টারের বাড়ির ছাদ থেকে শিশূ মামুনের হাত পা বাধা, মুখে কাপড় পেচানো অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। বাড়ির মালিক জয়নাল মাষ্টার ও তার ছেলে আরমান কে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সুজন মিয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় জয়নাল মাষ্টার কে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় জয়নাল মাষ্টার ও তার ছেলে কে ৩ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। রিমান্ডে পুলিশের কাছে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অ¯^ীকার করে তারা। মামলার সঠিক তদন্তের জন্য নিহত সুজনের বাবা-পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পদির্শক আব্দুল গাফফার কে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন। মুক্তিপণ চাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় রায়পুরা থানার মোহাম্মদপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে নাসির (২২) কে। গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাপক জেরার মুখে সে ঘটনার সাথে জড়িত বলে  স্বীকার করে। নাসির গোয়েন্দা পুলিশ কে জানায় রায়পুরার রাজনগর এলাকার একিট টিনশেড বাড়ির বারান্দার একটি ছোট স্টোর রুমে তাকে দুই দিন বন্দি রাখা হয়েছিল। গোয়েন্দা পুলিশ কে সাথে নিয়ে নাসির সে বাড়িতে যায় ও ওই স্টোর রুমে দাড়িয়ে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
নাসির পুলিশ কে জানায়, তার বন্ধু লিমন ও জিহাদ তাকে জানায় মামুন কে অপহরণের পরিকল্পনার কথা। এর বিনিময়ে সে ১০ হাজার টাকা পাবে। লিমন ও জিহাদ জানায় তার নানা জয়নাল মাষ্টার ও মামা আরমান এ ঘটনা জানেন। এতে আশ্বস্ত হয়ে নাসির এ কাজে রাজী হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই অপহরণ করা হয় মামুন কে। তারপর প্রাইভেট কারের পিছনে করে রাজনগরের ওই বাড়িতে বন্দি করে রাখে। শিশু মামুন যেন চিৎকার করতে না পারে সে জন্য তার মুখে কাপড় গুজে শক্ত করে বাধা হয়। দুই দিন এভাবে রেখে প্রায় অর্ধমৃত করে তাকে আবার প্রাইভেট কারের পিছনে করে নিয়ে যাওয়া হয় জয়নাল মাষ্টারের বাড়িতে। সেখানে তাকে শ্বাষরো করে হত্যা করার পর লাশ ছাদে ফেলে রাখা হয়। লাশ ওই বাড়ির ছাদে রাখার কারন ছিল মানুষ কে বুজানো যে কেউ খুন কেে তার বাড়িতে লাশ ফেলে রাখবেনা। তবে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে সেসব কৌশল কোন কাজে আসেনি। আবশেষে শিশু মামুন হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত আসামী গ্রেফতার হয়েছে। এ হত্যা মামলায় জয়নাল মাষ্টারের নাতি জিহাদ ও লিমন এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জনিয়েছে পুলিশ। অপহরণ ও খুনের ঘটনার বর্নণা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূরক জবানবন্দি দিয়েছে নাসির। 


#
নরসিংদী
১১/৭/১৮ইং

Thursday, July 5, 2018

নরসিংদীতে বন্দুক যুদ্ধে নিহত খুনি ইদ্রিসের নির্মমতা কুখ্যাত এরশাদ শিকদার কেও হার মানায়

নরসিংদীতে বন্দুক যুদ্ধে নিহত খুনি ইদ্রিসের নির্মমতা
কুখ্যাত এরশাদ শিকদার কেও হার মানায়



তৌহিদুর রহমান: কোন শত্রুতা নেই, নেই কোন রাগ ক্ষোভ, নেই প্রতিপক্ষ থেকে মেরে ফেলার চুক্তি। শুধুমাত্র ৫ হাজার কি তারও কম টাকা পাবার আশায় নির্বিঘ্নে একজন মানুষ কে শ্বাষরোধ কিংবা জবাই করে হত্যা। এ রকম পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ১৫ জনের মতো অটো চালক কে। খুনের সংখা লিখতে যেয়ে প্রায় লেখা অনেকেই ভুল বলতে পারেন। তবে খুনি ইদ্রিস নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সে কতগুলি খুন করছে। নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে সে অকপটেই স্বীকার করে খুনের ঘটনা। যা কিনা কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের কথা মনে করিয়ে দেয়। যদি অধরা থাকতো তবে কি ইদ্রিস এরশাদ শিকদারের চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠতো ? সে উত্তর পেতে জানতে হবে তার পৈশাচিকতার বর্ণনা। গোয়েন্দা পুলিশের কছে পাওয়া তার তথ্য তুলে ধরছি পাঠকদের মাঝে। বুজতে পারবেন ভবিষ্যতে ইদ্রিস কত মানুষের জীবন অবেলায় কেড়ে নিত।

ইদ্রিস কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রাঙ্গালিবস এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। পড়ালেখায় খুব বেশি দুর এগাতে পারেনি সে। পারিবারিক দারিদ্রতার কারনে খুব অল্প বয়সে সে কাজ নেয় ঢাকার নবাবপুরে। সেখানে টুকটাক চুড়ি করে হাত পাকাতে থাকে সে। তারপর তার আগমন ঘটে নরসিংদীতে। উদ্দেশ্য ছিনতাই টার্গেট ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা। তার এসব কাজে সহযোগীতার জন্য সে তার এলাকার দুর সম্পর্কের চাচা ও বন্ধু কে সাথে নেয়। তারা মিলে প্রথমে কোন স্থানে যাবার জন্য জন্য ভাড়া করতো অটো রিকশা। কিছদুর যাওয়ার পর কোন নির্জন স্থান দেখলেই সেই আটো চালকের দুই পাশ থেকে দুই জন গামছা প্যাচিয়ে জোড়ে টেনে ধরতে। তাকে হত্যা করে নিয়ে যাওয়া হতো অটো রিকশাটি। সে অটো রিকশা বিক্রি করতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কখনো ৬০ হাজার। টাকার ভাগাভাগি করে একেকজন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো ভাগ পেত। তাদের লোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতে থাতে তাদের এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞ। এসব ঘটনায় কখনো ধরা পড়েনি তারা। এতে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠে ইদ্রিস। তার নজর পড়ে নরসিংদীর আশেপাশের জেলাসহ তার নিজের জেলাতেও। নরসিংদীর কয়েকজন সহযোগী কে সে সব অভিযানে নিয়ে যেতনা। তার বিশ্বস্ত দুই সহযোগী চাচা শফিকুল ও ভাই সাইফুল কে সব কাজেই নিয়ে যেত। ইদ্রিস তার জেলা কুড়িগ্রামের কিছু সহযোগী কে সাথে জুটিয়ে নেয়। সেখানেও বেশ কয়েকটি অটো রিকশা ছিনতাই করে সে। 
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ইদ্রিস তথ্য দেয়, গত ১৫ মাসে সে প্রায় ৯ জন কে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে সে। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৪২ মাস সে অটো ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানায় সে। ইদ্রিস কতজন লোক কে হত্যা করেছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনা। শ্বাষরোধ কিংবা জবাই ছিল তার হত্যার উপায়। অটো রিকশা ছিনতাইয়ের সময় অনেক চালক কে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যেত। তাদের কতজনের ভাগ্যে মরণ জুটেছে তাও অজানা। মানুষ কে হত্যা করা ছিল তার কাছে সহজ একটি ব্যাপার। মাত্র ৩০ বছর বয়সী ইদ্রিসের নির্মমতা মনে করিয়ে দেয় খুলনার কুখ্যাত খুনির এরশাদ শিকদারের কথা। যে কিনা অল্প বয়স থেকেই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। হয়ে উঠে খুলনার আতংক। বরফচাপা, বুকের উপর উঠে নেচে পাজরের হাড় ভেঙ্গে হত্যা, সিমেন্ট এর বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদীতে ডুবানো, চাষ করা আফ্রিকান মাগুর কে আহার করানো হতো মানুষের শরীর দিয়ে। কত নারীর ইজ্জত ও জীবন লুটেছে সে তার কোন হিসেব ছিলনা। বহু অপরাদের জন্ম দেয়া এরশাদ শিকদার এর ফাসি হয়েছে জীবনের প্রায় শেষ অংশে। তার করা অপরাধের ফলে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল তার ক্ষতি কি পূরণ হয়েছে তা এখন অনেক বড় প্রশ্ন। তবে ইদ্রিসের নির্মমতার রেশ টেনেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধ। গত ৩০ জুন শনিবার প্রথম প্রহরে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে নিয়ে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে  নিয়ে যায়। সেখানে সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর গুলি চালায়। সহযোগীদের গুলিতে ইদ্রিস নিহত হয়েছে বলে দাবী করে পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবেই শেষ হয়েছে খুব অল্প বয়সে ভয়ংকর খুনি হয়ে উঠা আরও এক এরশাদ শিকদারের নির্মমতা। 


#
নরসিংদী
৫/৭/১৮ইং