নরসিংদী পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন
চাচাত ভাইয়ের টাকার লোভে জয়নাল মাষ্টার এর
পরিকল্পনায় শিশু মামুন কে অপহরন ও হত্যা
তৌহিদুর রহমান: টাকা আদায় করার জন্য রায়পুরার হাসিমপুরের জয়নাল মাষ্টার প্রতিবেশী চাচাত ভাইয়ের ৭ বছরের ছেলে কে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দায়িত্ব দেয়া হয় তার দুই নাতী জিহাদ ও লিমন কে । তারা দুইজন এ কাজে সহযোগীতা করার জন্য ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করে নাসির নামের তাদের এক বন্ধুর সাথে। তারপর শিশু নাসির কে অপহরণের পর শ্বাষরোধ করে হত্যা করে লাশ জয়নাল মাষ্টারের বাড়ির ছাদে ফেলে রাখে। আজ বুধবার নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। সংবাদ সম্মেলনে নিহত শিশুর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২০ জুন রায়পুরার হাসিমপুর
এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে নিখোজ হয় ৭ বছরের মামুন। তার সন্ধানে আশেপাশে খোজা-খুজি ও মাইকিং করা হয়। তারপরও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা। এর মধ্যে মামুনের পিতার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন করে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ এর বিনিময়ে মামুন কে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন দিয়ে মুক্তিপণের টাকার জন্য তাগাদা দেয়া হয়। তবে শিশু মামুনের বাবা-মা টাকা দিতে পারেনি। ঘটনার ৩ দিন পর ঘর ঘেষা প্রতিবেশী জয়নাল মাস্টারের বাড়ির ছাদ থেকে শিশূ মামুনের হাত পা বাধা, মুখে কাপড় পেচানো অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। বাড়ির মালিক জয়নাল মাষ্টার ও তার ছেলে আরমান কে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সুজন মিয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় জয়নাল মাষ্টার কে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় জয়নাল মাষ্টার ও তার ছেলে কে ৩ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। রিমান্ডে পুলিশের কাছে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অ¯^ীকার করে তারা। মামলার সঠিক তদন্তের জন্য নিহত সুজনের বাবা-পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পদির্শক আব্দুল গাফফার কে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন। মুক্তিপণ চাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় রায়পুরা থানার মোহাম্মদপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে নাসির (২২) কে। গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাপক জেরার মুখে সে ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। নাসির গোয়েন্দা পুলিশ কে জানায় রায়পুরার রাজনগর এলাকার একিট টিনশেড বাড়ির বারান্দার একটি ছোট স্টোর রুমে তাকে দুই দিন বন্দি রাখা হয়েছিল। গোয়েন্দা পুলিশ কে সাথে নিয়ে নাসির সে বাড়িতে যায় ও ওই স্টোর রুমে দাড়িয়ে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
নাসির পুলিশ কে জানায়, তার বন্ধু লিমন ও জিহাদ তাকে জানায় মামুন কে অপহরণের পরিকল্পনার কথা। এর বিনিময়ে সে ১০ হাজার টাকা পাবে। লিমন ও জিহাদ জানায় তার নানা জয়নাল মাষ্টার ও মামা আরমান এ ঘটনা জানেন। এতে আশ্বস্ত হয়ে নাসির এ কাজে রাজী হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই অপহরণ করা হয় মামুন কে। তারপর প্রাইভেট কারের পিছনে করে রাজনগরের ওই বাড়িতে বন্দি করে রাখে। শিশু মামুন যেন চিৎকার করতে না পারে সে জন্য তার মুখে কাপড় গুজে শক্ত করে বাধা হয়। দুই দিন এভাবে রেখে প্রায় অর্ধমৃত করে তাকে আবার প্রাইভেট কারের পিছনে করে নিয়ে যাওয়া হয় জয়নাল মাষ্টারের বাড়িতে। সেখানে তাকে শ্বাষরো করে হত্যা করার পর লাশ ছাদে ফেলে রাখা হয়। লাশ ওই বাড়ির ছাদে রাখার কারন ছিল মানুষ কে বুজানো যে কেউ খুন কেে তার বাড়িতে লাশ ফেলে রাখবেনা। তবে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে সেসব কৌশল কোন কাজে আসেনি। আবশেষে শিশু মামুন হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত আসামী গ্রেফতার হয়েছে। এ হত্যা মামলায় জয়নাল মাষ্টারের নাতি জিহাদ ও লিমন এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জনিয়েছে পুলিশ। অপহরণ ও খুনের ঘটনার বর্নণা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূরক জবানবন্দি দিয়েছে নাসির।
#
নরসিংদী
১১/৭/১৮ইং