নরসিংদীতে বন্দুক যুদ্ধে নিহত খুনি ইদ্রিসের নির্মমতা
কুখ্যাত এরশাদ শিকদার কেও হার মানায়
তৌহিদুর রহমান: কোন শত্রুতা নেই, নেই কোন রাগ ক্ষোভ, নেই প্রতিপক্ষ থেকে মেরে ফেলার চুক্তি। শুধুমাত্র ৫ হাজার কি তারও কম টাকা পাবার আশায় নির্বিঘ্নে একজন মানুষ কে শ্বাষরোধ কিংবা জবাই করে হত্যা। এ রকম পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ১৫ জনের মতো অটো চালক কে। খুনের সংখা লিখতে যেয়ে প্রায় লেখা অনেকেই ভুল বলতে পারেন। তবে খুনি ইদ্রিস নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সে কতগুলি খুন করছে। নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে সে অকপটেই স্বীকার করে খুনের ঘটনা। যা কিনা কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের কথা মনে করিয়ে দেয়। যদি অধরা থাকতো তবে কি ইদ্রিস এরশাদ শিকদারের চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠতো ? সে উত্তর পেতে জানতে হবে তার পৈশাচিকতার বর্ণনা। গোয়েন্দা পুলিশের কছে পাওয়া তার তথ্য তুলে ধরছি পাঠকদের মাঝে। বুজতে পারবেন ভবিষ্যতে ইদ্রিস কত মানুষের জীবন অবেলায় কেড়ে নিত।
ইদ্রিস কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রাঙ্গালিবস এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। পড়ালেখায় খুব বেশি দুর এগাতে পারেনি সে। পারিবারিক দারিদ্রতার কারনে খুব অল্প বয়সে সে কাজ নেয় ঢাকার নবাবপুরে। সেখানে টুকটাক চুড়ি করে হাত পাকাতে থাকে সে। তারপর তার আগমন ঘটে নরসিংদীতে। উদ্দেশ্য ছিনতাই টার্গেট ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা। তার এসব কাজে সহযোগীতার জন্য সে তার এলাকার দুর সম্পর্কের চাচা ও বন্ধু কে সাথে নেয়। তারা মিলে প্রথমে কোন স্থানে যাবার জন্য জন্য ভাড়া করতো অটো রিকশা। কিছদুর যাওয়ার পর কোন নির্জন স্থান দেখলেই সেই আটো চালকের দুই পাশ থেকে দুই জন গামছা প্যাচিয়ে জোড়ে টেনে ধরতে। তাকে হত্যা করে নিয়ে যাওয়া হতো অটো রিকশাটি। সে অটো রিকশা বিক্রি করতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কখনো ৬০ হাজার। টাকার ভাগাভাগি করে একেকজন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো ভাগ পেত। তাদের লোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতে থাতে তাদের এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞ। এসব ঘটনায় কখনো ধরা পড়েনি তারা। এতে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠে ইদ্রিস। তার নজর পড়ে নরসিংদীর আশেপাশের জেলাসহ তার নিজের জেলাতেও। নরসিংদীর কয়েকজন সহযোগী কে সে সব অভিযানে নিয়ে যেতনা। তার বিশ্বস্ত দুই সহযোগী চাচা শফিকুল ও ভাই সাইফুল কে সব কাজেই নিয়ে যেত। ইদ্রিস তার জেলা কুড়িগ্রামের কিছু সহযোগী কে সাথে জুটিয়ে নেয়। সেখানেও বেশ কয়েকটি অটো রিকশা ছিনতাই করে সে।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ইদ্রিস তথ্য দেয়, গত ১৫ মাসে সে প্রায় ৯ জন কে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে সে। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৪২ মাস সে অটো ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানায় সে। ইদ্রিস কতজন লোক কে হত্যা করেছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনা। শ্বাষরোধ কিংবা জবাই ছিল তার হত্যার উপায়। অটো রিকশা ছিনতাইয়ের সময় অনেক চালক কে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যেত। তাদের কতজনের ভাগ্যে মরণ জুটেছে তাও অজানা। মানুষ কে হত্যা করা ছিল তার কাছে সহজ একটি ব্যাপার। মাত্র ৩০ বছর বয়সী ইদ্রিসের নির্মমতা মনে করিয়ে দেয় খুলনার কুখ্যাত খুনির এরশাদ শিকদারের কথা। যে কিনা অল্প বয়স থেকেই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। হয়ে উঠে খুলনার আতংক। বরফচাপা, বুকের উপর উঠে নেচে পাজরের হাড় ভেঙ্গে হত্যা, সিমেন্ট এর বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদীতে ডুবানো, চাষ করা আফ্রিকান মাগুর কে আহার করানো হতো মানুষের শরীর দিয়ে। কত নারীর ইজ্জত ও জীবন লুটেছে সে তার কোন হিসেব ছিলনা। বহু অপরাদের জন্ম দেয়া এরশাদ শিকদার এর ফাসি হয়েছে জীবনের প্রায় শেষ অংশে। তার করা অপরাধের ফলে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল তার ক্ষতি কি পূরণ হয়েছে তা এখন অনেক বড় প্রশ্ন। তবে ইদ্রিসের নির্মমতার রেশ টেনেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধ। গত ৩০ জুন শনিবার প্রথম প্রহরে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে নিয়ে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেখানে সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর গুলি চালায়। সহযোগীদের গুলিতে ইদ্রিস নিহত হয়েছে বলে দাবী করে পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবেই শেষ হয়েছে খুব অল্প বয়সে ভয়ংকর খুনি হয়ে উঠা আরও এক এরশাদ শিকদারের নির্মমতা।
#
নরসিংদী
৫/৭/১৮ইং
No comments:
Post a Comment