নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় লিবিয়ায়
অপহরণকৃত ৪ বাংলাদেশীর মুক্তি
জড়িত ৩ বাংলাদেশী গ্রেফতার
তৌহিদুর রহমান :- নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ এর তৎপরতায় লিবিয়ায় অপহৃত হওয়া ৪ বাংলাদেশী নাগরিক মুক্তি পেয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল লিবিয়ার একটি শহর থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলা হয়। মোবাইল ফোনে ও ইন্টারনেট অ্যাপ ইমুতে অপহৃতদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের আর্ত্ন চিৎকার ও
নির্যাতনের ছবি স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়। অপহৃতদের স্বজনরা বিকাশ নাম্বারের সূত্র ধরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কাছে সহযোগীতা চান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ তৎপড়তায় ও কৌশল প্রয়োগের ফলে ও অপহরণকারীরা অপহৃতদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় নরসিংদীর বেলাব থেকে ২ মহিলা সহ ৩ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ মাসে মাদারীপুর জেলার মোকলেছ (২৫), সবুজ বেপারী (৩০), কুদ্দুছ মিয়া (৪৫) ও রুহুল আমিন শ্রমিক ভিসায় বৈধভাবে লিবিয়া যান। সেখানে নিরাপদে পৌছেছেন বলে তারা তাদের বাড়িতে জানান। এর কিছু দিন পর থেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। প্রায় এক মাস পর মোকলেছ এর বোন শাহানা বেগমের মোবাইল ফোনে বিদেশী একটি নাম্বার থেকে মিজান নামের এক ব্যাক্তি জানায় যে, তার ভাইসহ ৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের কে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রতি জনের জন্য ১০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ টাকা পাঠাতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশ নাম্বার দেয়া হয়। মিজানের সাথে কথা বলে শাহানা জানতে পারেন, পাকিস্তানী, ভারতীয় ও কিছু বাংলাদেশী দুষ্কৃতকারী লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের অপহরণ করার পর অমানুষিক নির্যাতন করে বাংলাদেশ থেকে টাকা নেয়ায়। টাকা না দিলে অনেককেই মেরা ফেলা হতো। অপহরণকারীরা অপহৃতদের উপর নির্যাতন চালিয়ে মোবাইল ফোনে তাদের স্বজনদের আর্তœচিৎকার শোনায়। শুধু তাই নয় ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন ইমুর মাধ্যমে নির্যাতনের ছবি পাঠায়। জরুরী ভিত্তিতে টাকা পাঠানো না হলে তাদের মেরে ফেলার হুমকী দেয়া হয়। বিকাশ নাম্বারের মালিক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত টাকা পাঠানোর তাগাদা দেয় মিজান। এরপর অপহৃতদের পরিবার জাহাঙ্গীর আলমের বিকাশ নাম্বারে ২ দিনে কয়েকটি ধাপে মোট ৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৬ শত টাকা পাঠায়। এই টাকা পাঠানোর পরও অপহরনকারীদের চাহিদা মতো টাকা না পাঠানোর কারণে অপহৃতদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। কোন উপায় না দেখে স্বজনরা পুলিশের উর্ধত্বন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য চান। বিকাশ নাম্বারের অবস্থানের ভিত্তিতে তাদের কে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার বিষয়টির গুরুত্বের সাথে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার টানা ৪৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও বেলাব থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো নরসিংদী বেলাব উপজেলার চরকাশিম নগর এলাকার মোঃ জীবন মিয়ার স্ত্রী মোসাঃ ফাতেমা আক্তার (২৭), একই এলাকার মিজান মিয়ার স্ত্রী সেলিনা আক্তার (২০) ও বিকাশের লেনদেনকারী কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানার দড়িগাও এলাকার ইমাত মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০)। সে বেলাব তে মা ফার্মেসী নামের একটি ওষুধ দোকানের মালিক। সেখানেই সে এই অপহরণের টাকা লেনদেন করতো।
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, পুলিশ সুপারের বিশেষ নির্দেশে আমরা অপহরণকারী চক্র’র সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের গ্রেফতার করার খবর লিবিয়ায় অপহরণকারীদের কাছে পৌছলে তারা অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকী দেয়। উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফারের বিশেষ কৌশলের কারনে অপহরণকারীরা অপহৃতদরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এই অপহরণ চক্রের সাথে বেলাব ও শিবপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন জড়িত। তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। পাকিস্তানী ও ভারতীয়দের সাথে আমাদের দেশের কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক এই অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত। এই ঘটনায় আটককৃত ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে বেলাব থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
#
তৌহিদুর রহমান,নরসিংদী
২৫/৪/১৭ইং
No comments:
Post a Comment