নরসিংদীর শিবপুরের শিশু জিসান হত্যা মামলার
আসামী রবিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী: নরসিংদীর আলোচিত স্কুল ছাত্র জিসান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী রবিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্র্যেট চন্দন কান্তি দেবনাথের খাসকামরায় জবানবন্ধি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে রবিন জানায় সে ও তার সঙ্গীরা গাছের মোটা ডাল ও কাঠ দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে জিসান কে। জিসান মনোহরদী উপজেলার শুকুন্দী গাছুয়ারকান্দা গ্রামের প্রবাসী মোস্তফা কামাল ও সাবেক ইউপি সদস্য সেলিনা বেগমের ছেলে এবং শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রুপণ কুমার সরকার রবিনের স্বীকারোক্তি দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত বুধবার দুপুরে উপ-পরিদর্শক রুপণ কুমার সরকারে নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। পরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারকৃত রবিন(২০) শিবপুর উপজেলার মোহড়পাড়া গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে। জবানবন্দি দেয়া শেষে রবিন কে জেল হাজতে প্রেরণ করেন আদালত।
গোয়েন্দা পুলিশ ও রবিনের স্বীকারোক্তি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন ঘুরাঘুরি শেষে বিকেলে বাস যোগে বাড়ি ফিরছিল
জিসান ও তার বন্ধুরা। বাসটি শিবপুর এসে আর যাবেনা বললে বাসের চালক ও হেলপারের সাথে বাদানুবাদ হয়। এরপর বাসের চালক ও হেলপার জিসান ও তার বন্ধুদের মারধর করে কম ভাড়া দেয়ার অজুহাতে বাসের ছাদে করে যেতে বলে। তখন তারা নিরুপায় হয়ে বাসের ছাদে করেই যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সিএন্ডবি বাজারে পৌছলে বাসের চালক আর যাবেনা বলে। এসময় জিসান ও তার বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাস চালকের সাথে তর্ক করতে থাকে। তাদের ঝগড়া দেখে আশেপাশে থাকা রবিন, হাবিবুল্লাহ মেহেদী, শাকিল, হাসেমসহ ও আরও ৪-৫জন এগিয়ে আসে। এসময় সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জিসানরা বিষয়টি এলাকায় মোবাইর ফোনের মাধ্যমে জানালে সেখান থেকে আরও কয়েকজন আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিন ও তার সহযোগীরা পাশের করাত কল থেকে লাঠি-সোটা নিয়ে তাদের উপর হামলে পড়ে। জিসান প্রাণ বাচাতে একটি চায়ের স্টলে ঢুকে। সেখান থেকে বের করে তাকে এলাপাথারি পিটাতে থাকে তারা। এসময় স্থানীয় বৃদ্ধ দেওয়ান আলী খলিফা তাকে বাচাতে এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয় রবিনরা। পরে আশেপাশের লোকজন তাদর উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। জিসানের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জিসানের বাবা বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন। জিসান হত্যায় ফুসে উঠে সাধারন মানুষ। তার হত্যার বিচার চেয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার ব্যাপি মানববন্ধন করা হয়। মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গোয়েন্দা পুলিশকে মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন।তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী
১/৬/১৭ ইং
No comments:
Post a Comment