নরসিংদীর কিশোরী আজিজার মুত্যু নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন
প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হয়ে কিশোরী আজিজা
নিজেই দোকান থেকে কিনে কেরোসিন
তৌহিদুর রহমান: কিশোরী আজিজা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে চেষ্টা করায় নিজ বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল প্রেমিকের কাছে। সে প্রেমিক কৌশলে তাকে শ্লীলতাহানি করে মোবাইলে ভিডিও ধারন করে। তারপর তার পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা দাবী করে এবং আজিজার কাছে থেকে নগট টাকা ও মোবাইল রেখে দেয়। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে মনের কষ্টে দোকান থেকে কেরোসিন কিনেছিল কিশোরী আজিজা। তারপর তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। কিশোরী আজিজা হত্যা মামলার তদন্তে বের হয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজিজার সে প্রতারক প্রেমিক ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা এই ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কিশোরী আজিজা আতœহত্যা করেছে বলেই মনে করছে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি হত্যা না আতœহত্যা তা নিশ্চিত করা হয়নি। আজ সকালে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আমেনা বেগম। কিশোরী আজিজা, তার প্রেমিক ও তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইলের কল রেকর্ড অবস্থান, তার প্রেমিক ও সহযোগীদের কল রেকর্ড এর সুস্পষ্ট প্রমান রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার দিন দুপুরে বাড়ি থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা, চাচী বিউটি বেগমের মোবাইল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আজিজা। বাড়ি থেকে বের হয়ে নরসিংদী শহরে প্রেমিক রোমানের সাথে দেখা করার জন্য যায়। সেখানে প্রেমিক রোমান ও তার বন্ধু সুজনের সাথে
দেখা কওে আজিজা। তাদের কাছে নিজেকে লাভলী বলে পরিচয় দেয় সে। সে রোমান কে জানায় তার বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করেছে, তাই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। প্রেমিকা আজিজাকে তাহার আসার কারণ রোমান জিজ্ঞাসা করিলে আজিজা জানায় তাহার পিতা-মাতা তাহার বিবাহ ঠিক করিয়াছে, সে বিয়েতে রাজিনা। রোমান কে সে ৩ মাসের জন্য একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দিতে বলে। ঘর ভাড়ার টাকা আজিজার কাছে আছে কিনা জিজ্ঞেস রোমান। আজিজা জানায় তার কাছে ৫ হাজার টাকা, মোবাইল আছে। তারপর রোমান ও তার বন্ধু সুজন নরসিংদী শহরের নাগরিয়াকান্দি সুইচগেইট এলাকায় সুজন তাহার দূসম্পর্কের ফুফু পেয়ারা বেগমের একটি রুম কিছুক্ষন সময়ের জন্য ২শত টাকার বিনিময়ে ভাড়া ঠিক করে। সুজন আসিয়া রোমান ও আজিজাকে ভাড়া করা রুমে নিয়া যায়। রোমান তার অপর বন্ধু রেজাউল কে ফোন করে ডেকে আনে। ওই রুমের ভিতরে রোমান আজিজার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে। এ দৃশ্য সুজন মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে। তারপর তারা এ ভিডিও আজিজাকে দেখিয়ে তার সাথে থাকা টাকা ও মোবাইল দিয়ে দিতে বলে। আজিজা এতে রাজি না হলে রোমানের বন্ধু সুজন আজিজার পিতার মোবাইলে ফোন দেয়। তা রিসিভ করে আজিজার ভাই সুজন। সুজন জানানো হয় আজিজাকে একটি ছেলের সাথে আটক করা হয়েছে। তাদের ছাড়িয়ে নিতে ১ লক্ষ টাকা লাগবে। তা নাহলে বোনের অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। আজিজার ভাই সুজন এতে অপারগতা প্রকাশ করে। সন্ধা সময় আজিজার খালা সুজনের(আজিজার ভাই) মোবাইলে ফোন দিয়ে রোমানের বন্ধু সুজন কে বলে আজিজার যেন ক্ষতি না করে। বিনিময়ে উনি ২০ হাজার টাকা পাঠাবেন। এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে রোমান ও তার বন্ধুরা আজিজার সাথে থাকা নগদ টাকা, ৩ টি মোবাইল ও গহনা জোড় করে রেখে দেয়। তারপর আজিজাকে রেজাউল ও সুজন রাত ৮ টায় ইজি বাইক ভাড়া কওে আজিজাকে বাড়ি যেতে বলে। আজিজা বাড়ীতে যাবার পূর্বে শিবপুরের কুটির বাজার এর মিজানুর রহমানের দোকান হতে ১ লিটার কেরোসিন তেল ক্রয় করে। পথিমধ্যে দেলোয়ার নামের পরিচিত ব্যাক্তি টর্চ লাইটের আলো জ্বেলে তাকে বাড়ী যেতে সাহায্য করেন। এর কিছুক্ষন পরেই বাড়ীর সংলগ্ন রবি ফরাজীর বাগানে দগ্ধ অবস্থায় চিৎকার শুনিয়া আশে পাশের লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করিয়া চিকিৎসার জন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। পুলিশ সুপার আরও জানান, পরিবারের সদস্যরা চাচী বিউটি বেগমের মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাচীকে আসামী করে যে মামলা দায়ের করেছেন তার সাথে ঘটনার কোন মিল নেই। পরিবারের সদস্যরা এসব বিষয়ে রোমানের বন্ধুদের সাথে যে কথা বলেছে তার কল রেকর্ড, অডিও ক্লিপ ও গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
চাচীর পড়কিয়া দেখে ফেলায় কিশোরী আজিজাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাচী ও তার সহযোগীকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে বক্তব্য দেন নিহতের বাবা ছাত্তার। যা বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয়। ঘটনার ৪ দিনে এর মূল রহস্য উদঘাটিত হয়। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(শিবপুর সার্কেল) রেজওয়ান আহমেদ, মামলার তদন্তকর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার তৎপড়তায় ঘটনার মূল রহস্য ও জড়িতদেও গ্রেফতার করা হযেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, নিহতের দাদী তমুজা বেগম, চাচী বিউটি বেগম। চাচী বিউটি বেগমের মোবাইল, ও অশ্লীল ভিডিও ধারনের মোবাইল জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রোমান, সুজন ও রেজাইল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
#
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী
১/১১/১৭ইং
No comments:
Post a Comment