আদালতে খুনি বাদল ও রুবেলের স্বীকারোক্তি
পরকিয়ার প্রেমের অন্তরঙ্গ ভিডিও হৃদয়ের মোবাইলে
থাকায় পরিকল্পনা করে তাকে খুন করে দুই বন্ধু
তৌহিদুর রহমান: হৃদয়, বাদল ও রুবেল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরকিয়া প্রেমিকার সাথে কাটানো বাদলের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও তার অগোচরে নিজের মোবাইলে নেয় হৃদয়। এই ভিডিও দেখিয়ে কথিত সেই বিবাহতা মহিলার কাছ থেকে ব্ল্যাক মেইল করে টাকা আদায় করে হৃদয়। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদল ও রুবেল পরিকল্পিত ভাবে এক নির্জন গোরস্থানে হত্যা করে হৃদয় কে। আদালতে এ ভাবেই খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে দুই খুনি বাদল ও রুবেল। গত সোমবার নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়ায়েজ আল করণীর খাস কামরায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। গত ২৯ জানুয়ারী নিখোজ হয় নরসিংদী হাজিপুরের গোপাল চন্দ্র সাহার ছেলে হৃদয় সাহা (২৫)। এর দুই দিন পর রায়পুরার হাসনাবাদ এলাকার এক নির্জন গোরস্থানে তার লাশ পাওয়া যায়। এর ২ দিন পর এলাকাবাসী ওই গোরস্থানে একটি মরদেহ দেখে পুলিশ কে খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বাদলের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদি হয়ে রায়পুরা থানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার এই দুই খুনিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। জবানবন্দি দেয়া আসামীরা হলো, নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর এলাকার হারাধন দাসের ছেলে বাদল দাস (২৫) ও একই এলাকার গোপাল চন্দ্র সাহার ছেলে হৃদয় সাহা (২৫)। তারা হৃদয় হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
মামলার তদন্ত কর্মকতা জানান, জেলা পুলিশ সুপার এর নির্দেশে গত ১ ফেব্রয়ারী মামলার তদন্তভার পাই। খুনিরা খুব পরিকল্পিতভাতে হত্যাকান্ড টি ঘটায়। অনেক আক্রোশের কারনেই এই হত্যার ঘটনা ঘটে। হৃদয়ের মরদেহের পাশে পাওয়া ২ টি মোবাইলের সূত্র ধরেই খুনিদের চিহ্নিত করা হয়। যার একটি হলো হৃদয়ের ও অপরটি তার বন্ধু বাদলের। সেই সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় বাদল কে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার আংশিক বর্ণনা দেয়। এরপর তার দেয়া তথ্যমতে গ্রেফতার করা হয় রুবেল কে। তাদের দুই জন কে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হৃদয় কে হত্যার বর্ণনা ও কারন জানায়। তারপর তাদের কে আদালতে প্রেরণ করলে, তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, বাদলের সাথে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই মেয়ের অন্য লোকের সাথে বিয়ে হলেও বাদলের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। তারা বিভিন্ন সময় অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা করতো। এসব অন্তরঙ্গ দৃশ্য বাদল তার মোবাইলে ভিডিও করে রাখতো। হৃদয় কৌশলে বাদলের মোবাইল থেকে ভিডিও গুলি তার মোবাইলে নিয়ে নেয়। এরপর সে এই ভিডিও দেখিয়ে ওই মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো সে। এ ঘটনা জানার পর ক্ষিপ্ত হয় বাদল। তার অপর বন্ধু রুবেলের সাথে পরিকল্পনা করে হৃদয় কে খুন করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ জানুয়ারী রায়পুরা আমিরগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় গিয়ে ৩ বন্ধু মাদক সেবন করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাঁজা সেবনের উদ্যেশে মির্জানগর বাহেরচর এলাকার নির্জন একটি কবরস্থানে যায়। সেখানে উপুর্যপুড়ি গাঁজা সেবন করে। গাঁজা সেবন কালে হৃদয়কে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে রুবেল হৃদয়ের গোপনাঙ্গে নৃশংসভাবে আঘাত করে।
জবানবন্দি শেষে আদালত দুই খুনি কে কারাগারে প্রেরণ করেন।
#
তৌহিদুর রহমান,নরসিংদী।
৬.১.১৮ইং
No comments:
Post a Comment