নরসিংদীর চিনিশপুরে সুজন হত্যা
চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে স্ত্রীর প্রেমিক তামজীদ
তৌহিদুর রহমান: নরসিংদীর চিনিশপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার মুল হোতা ধরা পড়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার এক দিনের মাথায় স্ত্রী অদ্বিতার প্রেমিক তামজীদ কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত খূনি তামজীদ (১৮) রাজাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌস মিয়ার ছেলে। তারা নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লায় বাসিন্দা। গ্রেফতারের পর তামজীদ নিজেই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতী, রক্তমাখা গেঞ্জী ও মুখ বাধার কাছে ব্যবহৃত কাপড় লুকানো স্থান হতে বের করে গোয়েন্দা পুলিশ কে দেয়। ক্ষোভের বশে স্ত্রীর প্রেমিকাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে আজ বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রুপণ কুমার সরকার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। এর আগে নিহতের ভাই বাদী হয়ে স্ত্রী অদ্বিতি, তার ভাই ও মাকে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সে মামলায় অদ্বিতি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ১৬ তারিখ বুধবার রাত ১১ টার দিকে নরসিংদী চিনিশপুর এলাকায় স্ত্রী সহ শ্বশুড়বাড়ী যাবার পথে সুজন সাহা কে কুিপয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের পর থেকেই পুলিশ সুপার এর নির্দশে ও ওসি ডি বির নেতৃত্বে ও পরামর্শে ছায়া তদন্ত শুরু কওে গোয়েন্দা পুলিশ । রাজার্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা অদ্বিতার একজন মুসলমান প্রেমিকের তথ্য দেয়। এরপর অদ্বিতির মোবাইল কল ও একটি এসএমএস এর সূত্র ধরে তদন্ত চলতে থাকে। সেই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ও প্রেম এর বিষয়টি জানার পর তামজীদের মোবাইল ফোন রেকর্ড নেয়া হয়। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে তার মোবাইলে উপস্থিতি পাওয়া যায়। তারপরই শুক্রবার দিবাগত শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুন করার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। তারপর সে নিজে গোয়েন্দা পুলিশ কে ঘটনাস্থলে নিয়ে কিভাবে খুন করেছে তা দেখায়। তারপর সে দগরীয়া এলাকার একটি বাড়ির ঝোপ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, রক্তমাখা গেঞ্জী ও মুখ বাধার কাজে ব্যবহৃত কাপড় বের করে দেয়।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, নিহত সুজনের স্ত্রী ও তামজীদেও সহপাঠী অদ্বিতী সাহার সাথে বিগত প্রায় ৫ বছর যাবৎ তামজিদের প্রেম এর সম্পর্ক ছিল। তারা হিন্দু- মুসলমান হওয়ায় তাদের প্রেম পরিবার মেনে নেয় নি। মেয়ের অভিভাবক জোড়র্পূবক অদ্বিতি কে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের পরও তামজীদের সাথে যোগাযোগ রাখে অদ্বিতি। নরসিংদী আসলে তামজীদের সাথে দেখা করতো সে। অদ্বিতি শ্বশুড়বাড়ীতে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলে তামজীদের সাথে কথা বলতো। এক পর্যায়ে কথার্বাতার বিষয়টি ধরা পড়ে এবং সাংসারিক অশান্তি শুরু হয়। কিন্তু সে প্রেমালাপ বন্ধ থাকেনি। একদিন স্বামী সুজন সাহা তামজীদের মোবাইল কল ধরে ফেলে ও তাকে গালি-গালাজ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় তামজীদ। মেয়েটি তামজদিকে বলে তার ঐ সংসার আর ভালো লাগে না, পারলে কিছু একটা করতে। কিছু একটা করার প্লান করে তামজীদ। নরসিংদীতে বাবার বাড়ীতে মনসা পূজায় অংশগ্রহন করার জন্য স্বামীকে নিয়ে আসবে বলে জানায় অদ্বিতি। এ সুযোগ কাজে লাগায় সে। ঘটনার দিন মেয়েটি স্বামী সুজন কে নিয়ে আসবে আর তামজদিকে মোবাইলে অবগত করবে। ট্রেন থেকে নামার পর তামজীদের মোবাইলে তাদের আসার বিষয়টি এসএমএস করে জানায় অদ্বিতি। তামজীদ তার বাসা থেকে সাদা গেঞ্জী মুড়িয়ে ঘটনাস্থলে একটি ঝোপের আড়ালে ওৎ পেতে থাকে। রিকশা ঘটনাস্থলে পৌছার সাথে সাথেই তামজীদ রিকশার গতি রোধ করে সুজনকে কোপাতে থাকে। ঘাড়ের উপর মাথায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলে পালিয়ে যায় সে। আজ শনিবার বিকেলে নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্র্যাট মনিষা রায়ের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তামজীদ।
সুজন হত্যার সাথে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধারের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম, জেলা গোয়েন্দা পুশিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা তৎপড়তা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় খুব দ্রুত এই হত্যার খুনিকে গ্রেফতার ও কারন উদঘাটন করা হয়েছে। প্রেমিকের প্রতি দূর্বলতা ও তার স্বামীর গালি-গালাজে সৃষ্ট ক্ষোভের ফলেই এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। অতি শীঘ্রই এ হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হবে।
#
তৌহিদুর রহমান
১৯/৮/১৭ইং
No comments:
Post a Comment