Monday, July 10, 2017

নরসিংদী আড়াইহাজার সীমান্তের পুরিন্দা এলাকা থেকে বন্টন হচ্ছে ইয়াবার চালান


সক্রিয় ৪ ডিলার 
নরসিংদী আড়াইহাজার সীমান্তের
পুরিন্দা এলাকা থেকে বন্টন হচ্ছে ইয়াবার চালান


তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী: নরসিংদীতে পুলিশ ও প্রতিপক্ষের চোখ এড়াতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। নরসিংদী ও আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দা ও সাতগ্রাম এলাকা কে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবার চালান লেনদেন করার জন্য। এজন্য সেখানে সক্রিয় রয়েছে ৪ ডিলার ও তাদের অধিনস্থ প্রায় ৩০ জনের উপর খুচরা বিক্রেতা। ইয়াবা চালানের জন্য নরসিংদী জেলার পূর্বের প্রসিদ্ব স্থানসমূহ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় ও প্রতিপক্ষের চোখ ফাকি দিয়ে নির্বিঘেœ ইয়াবার ব্যবসা করার জন্যই তারা ওই এলাকা কে বেছে নিয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে ও পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানকার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নরসিংদীর চিহ্নিত ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী এমদাদুল হক ওরফে এমদা। যাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেব এক নামে চিনে নরসিংদীর মানুষ। যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বহু মাদকের মামলা রয়েছে। সে আগে পলাশ উপজেলার চর্ণগরদী ও সদর উপজেলা চিনিশপুর কে কেন্দ্র করে তার মাদকের ব্যবসা করতো। এইসব এলাকায় বারবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এখন সে তার স্থান পরিবর্তন করে পুরিন্দা এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। তার ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে কাজ করছে রাতুল আহম্মেদ সুমন নামের আরও এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের কে মূল ইয়াবার চালান দেয় ইয়াবার ডিলার জিন্নত আলী। সে টেকনাফ কেন্দ্রীক ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইয়াবার বড় চালান তার হাত ধরেই আসে এমদা, জি›ন্নত আলী, ও সুমনের কাছে। জিন্নত আলী খুব বুদ্ধিমত্তার সাথেই পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে করছে এই ব্যবসা। কেতাদুরুস্ত পোশাক আর ভারী চাল চলনে নিজেকে আড়াল করে রাখে সে। দামী প্রাইভেটকারে করে সে ইয়াবারন চালান সরবারহ কর থাকে। তাকে এই কাজে সহযোগীতা করে নরসিংদীর অজ্ঞাত এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। জিন্নত আলী নারায়নগঞ্জ, আড়াইহাজার ও
গাউছিয়া এলাকায় বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবাসায়ীর কাছে ইয়াবার চালান দেয় বলে জানা গেছে। আড়াইহাজারের পুরিন্দা এলাকার এমদা, সুমনের কাছে আসে জিন্নত আলীর ইয়াবা চালান। সেখান থেকে এমদা ও সুমন তাদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসায়দের কাছে সরবারহ করে ইয়াবা।
নরসিংদী সিমান্তবর্তী পুরিন্দা এলাকার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন সাতগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অদুদ হোসেন। তিনি জানান, নরসিংদীতে ইয়াবা সরবারহের জন্য এমদা ও সুমন এখন পুরিন্দা এলাকা ব্যবহার করছে। সুমন নামে মাত্র একটি ফার্ণিচারের দোকান দিয়েছে, যা সারাদিন বন্ধ থাকে শুধু বিশেষ বিশেষ সময় সে দোকান খোলা হয়। সে সময় প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল যোগে নরসিংদীর মাদক ব্যবসায়ারী ওই দোকানে আসে। ধারনা করা হচ্ছে সেখান থেকেই খুচরা ইয়বার চালান সরবারহ করা হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের জন্য আমি আড়াইহাজার ও পার্শ্ববর্তি মাধবধী থানাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এই মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে ইউনিয়নবাসী জোড় দাবী জানাচ্ছে। 
কিছুদিন পূর্বে এমদা ও সুমন কে ধরতে মধাবদী থানা পুলিশ অভিযান চালায়। সেখানে তাদের কে ধরতে না পারলেও সুমনের কথিত ফার্ণিচারের দোকান হতে একটি টালি খাতা উদ্ধার করে পুলিশ। সে খাতায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম ও তাদের কাছে পাওনা টাকার হিসেব লেখা ছিল। ওই খাতায় যেসব মোবাইল নম্বর ও নাম পাওয়া যায় তারা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
মাধাবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, নরসিংদীতে পুলিশের ক্রমাগত অভিযানের ফলে ভিন্ন উপায় বেছে নিয়েছে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ারী। তারা নারায়নগগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার নরসিংদী সীমান্তবর্তী পুরিন্দা এলাকা কে ব্যবহার করছে ইয়াবা সরবারহের জন্য। এ বিষয়ে সাতগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমাদের কে অবগত করেন। গোয়েন্দা নজরদারী ও সোর্সের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে এমদা ও সুমন কে ধরতে সে এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। অভিযানে ইয়াবা ব্যবসার সাতে সম্পৃক্ত একটি খাতা আমরা পেয়েছি। তাদের ইয়াবা ব্যবসা করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে আসছে। সে মোতাবেক আমরা ওই ইয়াবা সিন্ডিকেট কে ধরতে কাজ করছি। 
নরসিংদীতে মরণঘাতী ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তবে পুলিশ কে ফাকি দিতে সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসা চলছে। এ অবস্থায় দুই জেলার সমন্বিত কার্যক্রম ছাড়া তাদের কে আইনের আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল। 

#
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী
১০/৭/১৭ইং   

No comments:

Post a Comment