নরসিংদীর পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন
নরসিংদীতে ব্যাটারী অটোরিকশা ছিনতাই
চক্রের ৫ খুনিসহ গ্রেফতার ৯
তৌহিদুর রহমান: ব্যাটারি অটোরিকশা ভাড়া করে কোন নির্জন স্থানে পৌছলে ধারাল অস্ত্র দিয়ে চালক কে জবাই না হয় গামছা দিয়ে প্যাচিয়ে শাষরুদ্ধ করে করে হত্যা। তারপর সে অটোরিকশা বিক্রি করে টাকা ভাগা-ভাগি। অনেকে মিলে করা এ নৃশংস কাজের জন্য জন প্রতি জনে টাকার ভাগ পরে মাত্র ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এই টাকার জন্য ভয়ংকর এই অপরাধীদের কাছে মানুষ হত্যা যেন মামুলী ব্যাপার। নিজেদের লুকিয়ে রেখে এতদিন অধরা থাকলেও এবার নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো এ চক্রের ৯ জন। যার মধ্যে ৫ জন সরাসরি চালক কে খুন করে ছিনতাইয়ের কাজটি করতো। আর বাকি ৪ জন ছিনতাইকৃত অটো রিকশার বেচা কেনার সাথে জড়িত। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার (পিপিএম) এর নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের দল নিরবিচ্ছিন্ন তদন্ত শেষে তাদের গ্রেফতার করেন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন (বিপিএম) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। আজ শনিবার সকালে নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৯ এপ্রিল নরসিংদীর শীলমান্দী থেকে হাবিবুর রহমান নামের এক অটো চালকের জাবাই করা লাশ পাওয়া যায়। তাকে হত্যার পর অটো রিকশা টি নিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এই ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ ফারুক মিয়া বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এর আগে এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী দগড়িয়ায় নরসিংদী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর অদুরের আবাদী জমি থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারনা করেছে তাকে হত্যা করে অটো রিকশা ছিনতাই করা হয়েছে। নিহতের কোন পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানের বেশ কয়েকটি অটো রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কারন উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কে বিশেষ নির্দেশনা দেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে উপরোক্ত মামলা তদন্তভার দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার কে। নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর এলাকার অটো রিকশা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বের হয়ে আসে অটো রিকশা ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক ঘটনা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, কুড়িগ্রাম জেলার কচাকাটা থানার রাঙ্গালিরকুটি এলাকার জহির আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৮), বর্তমানে নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকার ভাড়াটিয়া, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বাগিয়া এলাকার স্বপন ভুইয়ার ছেলে তুহিন (২২), বর্তমানে নরসিংদীর বাগহাটা এলাকার বাসিন্দা, নরসিংদী শহরের কাউরিয়া পাড়া মহল্লার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে হৃদয় (২২), মনোহরদীর চালাকচর গাংপাড় এলাকার সাহাবুদ্দিন এর ছেলে বুলবুল (২৫), মাধবদীর বড় গদাইচর এলাকার কাউসার মিয়ার ছেলে রনি (২৪)। এরা অটো রিকশা ছিনতাই ও খুনের সাথে জড়িত। এছাড়া ছিনতাইকৃত ব্যাটারী অটো রিকশা বেচা-কেনার সাথে জড়িত থাকায় আরও ৪ জন কে আটক করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ১০ টি অটো রিকশা উদ্ধার কর হয়েছে। অন্যান্য আটককৃতরা হলো, নরসিংদী সাটির পাড়া মহল্লার আউয়াল মিয়ার ছেলে আল আমিন (২৩), একই মহল্লার মোহাম্মদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (১৯, নারায়গঞ্জ আড়াইহাজার দেবই এলাকার আলী মোহাম্মদ এর ছেলে সায়েম মিয়া (৩৬) ও মাধবদীর বিরামপুর এলাকার আজগর আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম ঠান্ডা (২২)।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অটো রিকশা ছিনতাই করেতা। তারা এই ছিনতাইয়ের সময় অনেক কেই হত্যা করেছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। তাদেও কে অধিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য জেলার পুলিশ তাদের ব্যাপারে খোজ খবর নিচ্ছে।
#
নরসিংদী
১২/৫/১৮ইং
No comments:
Post a Comment