নরসিংদী ডেন্টাল এন্ড জেনারেল হাসপাতালে
ভুল চিকিতসায় রোগির মৃত্যুর ঘটনায় ১ দিনেই আপোষ মিমাংসা
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী :- নরসিংদী ডেন্টাল এন্ড জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিতসায় এক রোগির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার মাত্র ১ দিনেই সঠিক কারন উদঘাটন ছাড়াই প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। নরসিংদীর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল এই আপোষ মিমাংসা করা হয়। রোগীর মৃত্যুর পর তাদের তিন স্বজনকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রাখে ও মারধর করা হয়। মারধরে নিহত রোগীর ছোট ভাই গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙ্গচুর চালায়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুক্রবার বিকেলে পৌর শহরের ভেলানগরস্থ নরসিংদী জেনারেল ও ডেন্টাল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনার এক দিনেই আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। নিহতের লাশ সুরতাহাল করা হলেও পওে আর ময়না তদন্ত করা হয়নি। নিহত রোগীর নাম আছমা বেগম(২০) সে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী ও রায়পুরা উপজেলার হাটুভাংঙ্গার আ: রহমানের কন্যা । এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক রহমুতল্লাহসহ দুইজন কে আটক করলেও পওে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্র“য়ারী বুধবার বিকেলে ডা: কাজী নাজমার
তত্ববধানে নিহত আছমা বেগমের সিজারিয়ান অপারেশন এর মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়ে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের লোকজন তাকে উন্নত চিকিতসার জন্য অন্যত্র নিতে চাইলে তাতে বাধা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুরে রোগী খাবার খায়। এরপর পরই তার শ্বাষকস্ট হতে থাকে। এসময় তাকে একটি ইনজেশন পুশ করে কর্তব্যরত নার্স। এর কিছৃক্ষন পর তাকে উন্নত চিকিতসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর জন্য এম্বুলেন্স ডাকে হাসপাতাল কর্তপক্ষ। এর মধ্যেই মৃত্যু হয় আছমা বেগমের। এসময় রোগীর স্বজনারা হাসপাতালের লোকজনের কাছে বারবার রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেখতে চাইলেও রাজী হয়নি তারা। এক পর্যায়ে হাসপাতালের পিয়ন ব্যবস্থাপত্র ফটোকপি করার কথা বলে বাহিরে চলে যায়। তারপর সে আর ফিরে আসেনি। এতে রোগীর স্বজনরা রাগারাগী করলে তাদের কে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে রোগীর লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে ও হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষের কাচ ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় পুলিশ রোগীর ব্যবস্থা উদ্ধার করতে হাসপাতালে তল্লাশী করলেও কোথাও তা খুজে পাওয়া যায়নি। এমন কি হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে ওষুধ সরবারহের রেজিষ্টার খুজে পাওয়া যায়নি। তবে রোগীর ভর্তি রেজিষ্টারে ডাঃ কাজী নাজমার অধীনে তার ভর্তির রেকর্ড রয়েছে। এসময় হাসপাতালের পরিচালক রহমুতল্লাহসহ দুইজন কে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের সকল লোকজন অন্যান্য ভর্তি রেখেই পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় তাদের কে অন্য হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এই ঘটনায় জেলা ব্যাপি ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। সবাই ঘটনার সঠিক কারন জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। অথচ সঠিক কারন উদঘাটন না হলেও একদিনের মাথায় নরসিংদীর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আপোষ মিমাংসা করে দেন। নিহতের স্বামী আপোষ মিমাংসা করার কথা স্বীকার করেছেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, রোগীর স্বজনরা এই বিষয়ে কোন ধরনের অভিযোগ করেনি। শুনেছি এ বিষযে আপোষ মিমাংসা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। রোগীর স্বজনদেও অনিচ্ছার কারনে ময়না তদন্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, এই হাসপাতালে কোন ধরনের প্রশিক্ষন ও সনদ ছাড়াই নার্স নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ডাক্তার অপারেশনের আগে রোগীর শারারিক অবস্থা ভালভাবে যাচাই করেননা। অপারেশনরে পর রোগীর আর খবর নেন না। যার ফলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায়না। ডা: কাজী নাজমা দারুণ ব্যাস্ততা দেখিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ভাল করে কথাও বলেননা। এ ব্যপারে হাসপাতালের লোকজন কথা বলতে রাজি হয়নি। সচেতন মহল এই রোগীর মৃত্যুর সঠিক কারন উদঘাটন ও এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। যেন ভবিষ্যতে অবহেলার দরুন কোন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ না উঠে। অথচ জনস্বার্থের দিক বিবেচনা না করে একদিনেই আপোষ মিমাংসা, রোগীর প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আরও প্রকট আকার ধারন করতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী
৪/২/১৭ইং
No comments:
Post a Comment