Sunday, May 21, 2017

নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান ৫ জন র‌্যাব হেফাজতে



নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান
৫ জন র‌্যাব হেফাজতে


তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী: নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে।  নারায়ণগঞ্জ থেকে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন। রোববার সকালে সে বাড়িতে অবস্থান করা ৫ জনকে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শনিবার বিকেল থেকে তৈরী হওয়া রুদ্ধশ^াষ মুহুর্তের অবসান হলো। সকালে ভিতরে থাকা ব্যাক্তিদের কয়েকজন  স্বজন র‌্যাবের সাথে ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর পর থেকে একজন একজন করে তাদের কে বাহিরে নিয়ে আসা হয়। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পরপর পাঁচ যুবককে এই বাড়ি থেকে বের করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মাইক্রোবাসে তোলা হয়। আটককৃতদের কড়া নিরাপত্তায় নারায়নগঞ্জ র‌্যাব- ১১ কার্যালয় নেয়া হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।
যে ৫ জন কে র‌্যাব হেফাজতে নেওযা হয়েছে তারা হলো, নরসিংদী সদর উপজেলার চরদীঘলদি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান এর ছেলে সালাউদ্দিন (২৫), নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নুরুল ইসলাম মোল্লার ছেলে বাছিকুল(২০), সদর উপজেলার চরভাসানিয়া পাইকারচর গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার ছেলে আবু জাফর(২২), গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার আবদুল মজিদ মিয়ার ছেলে মাসুদুর রহমান মাসুদ(১৭),  ও নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র মশিউর রহমান(২০)। তবে তাদের পরিচয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি র‌্যাব ১১।
অভিযান শেষে সাংবাদিকদের কে অভিযান বিষয়ে অবহিত করেন র‌্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক লে.কর্ণেল মুফতি মাহমুদ। তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এখানে অভিযান চালিয়েছি। টানা ১৮ ঘন্টা অবস্থানের র‌্যাব সদস্যরা বাড়ির ভিতর থাকা ৫ জন কে নিরাপদে বের করে এনেছে। তাদের কে নারায়নগঞ্জে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের নাম পরিচয় যাচাই বাছাই করা হবে। আমাদের কাছে যে গোয়েন্দা তথ্য আছে সে ভিত্তিতে তাদের কে পর্যালোচনা করা হবে। তারা এই বাড়িটি ভাড়া নেয় ৩ মে। এখানে যারা থাকার কথা ছিল তারা না থেকে সেখানে অন্য লোক থাকা শুরু করে। সিলেটের  আতিয়া মহলের সক্রিয় জঙ্গিদের সাথে এই ৫ জনের কারও সম্পৃক্তা থাকতে পারে। ভিতরে থাকা লোকদের কে বের করার পর পুরো বাড়ি তল্লাশী করে র‌্যাবের বোমা ডিসপোজাল টিম। সেখান থেকে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।  
অভিযানের আগের রাতে মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি অভিযানের পর জঙ্গিরা ঢাকার আশপাশে জেলায় অবস্থান নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাছে বাড়িটি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। গাবতলীর এই বাড়িতে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেঁড়েছে। তাই এই অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের কাছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ রয়েছে। তবে র‌্যাবের এই দাবীর বিপরীতে বিতরে আটকে থাকা কয়েকজন ব্যাক্তিদের স্বজনরা বারবার দাবী করছিল তারা শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য সে বাড়িতে গিয়েছিল। তাদের কে বাহির থেকে আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ভিতরে থাকা আবু জাফর সাংবাদিকদের সাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাদের বের করার অনুরোধ করে। সর্বশেষ রাতের বেলায় আবু জাফর তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে পোষ্টের মাধ্যমে তাকে বাচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রি কে অনুরোধ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ ও আওয়ামিলীগ কর্মী বলে দাবী করেন তিনি। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। 
র‌্যাবের অভিযানে কি হতে পারে এমন উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে সারারাত পার করে ওই এলাকার মানুষ। নরসিংদীর পুলিশ, ডিবি, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম, সিআইডি ঢাকাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে যে, গভীর রাতে বাড়ীটিতে অভিযান চালানো হবে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা ভিতরে থাকা ব্যাক্তিদের আতœসমর্পনের আহবান জানিয়েছেন। রাত ১১ টার দিকে ওই বাড়ির ৫০০ গজ এলাকা ১৪৪ ধারা জারিা করে জেলা প্রশাসক। সেখান থেকে সাংবাদিকদের সরে যেতে বলা হয়। এরপর আজ রোববার সকালে ৫ জন কে র‌্যাব হেফাজতে নেয়ার মাধ্যমে অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। তবে বাড়িটিতে তেমন কিছু না পাওয়ায় ও আটককৃতদের ব্যাপারে র‌্যাবের তেমন কোন তথ্য দিতে না পারায় তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারন মানুষ। যে বাড়িটিতে ৫ জন লোক অবস্থান করছিল সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে র‌্যাবের এত সময় লাগলো কেন তা নিয়েই তাদের প্রশ্ন। কেমন ধরনের গোয়েন্দা তথ্য ছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। 

#
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী
২১/৫/১৭ইং

No comments:

Post a Comment