নরসিংদীতে ৪ টি বিদেশী পিস্তল সহ
৪ জন কে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ
জেলার ইতিহাসে একসাথে সবচেয়ে বেশী অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা!
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার
তৌহিদুর রহমান, নরসিংদী : নরসিংদীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ৩টি পিস্তল, ১টি রিভলবার ও ৯ রাউন্ড তাজা গুলি সহ ৪ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। যা জেলায় একসাথে সবচেয়ে বেশী অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা। আজ সোমববার দুপুর ১২ টায় নরসিংদীর পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান, নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম (বিপিএম)। গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার হাজীপুর ও বীরপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার কৃতরা হলো সদর উপজেলার বীরপুর এলাকার জয়নাল আবেদিন এর ছেলে মিনহাজুল আবেদিন ওরফে রিজভী(২৪), হাজীপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার আলী ইমানের ছেলে আমির হোসেন (২২), সওদাগর পাড়ার মো: শাহজাহান শেখের ছেলে মুন্না (২২) ও রুস্তম আলীর ছেলে আ: রশিদ মিয়া (২৯)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, নরসিংদী জেলায় গোয়েন্দা পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অংশ হিসেবে উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার এর নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এই অভিযান চালায়। গোপন সংবাদের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, শহরের বীরপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী রিজভী কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে অস্ত্র মজুদ করছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে, গোয়েন্দা পুলিশের দলটি আভিযান শুরু করে বীরপুরে অবস্থিত রিজভীর বাড়িতে। নিজেদের পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললে ডিবি টিম, হঠাৎ করেই দরজা খুলে পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করে গুলি চালাতে চেষ্টা করে রিজভী। এসময় কৌশলে তাকে পরাস্ত করে অস্ত্র কেড়ে নেন এস.আই গাফফার। পিস্তলটি তে লোডকৃত অবস্থায় ৩ টি বুলেট ছিল। এসময় তার কাছে আরও অস্ত্র আছে কিনা এই বিষয়ে জেরা করলে, সে নিজ হাতে ঘরের ভিতর মেঝেতে বিছানো ঝাঝিমের নীচ হতে আরও একটি রিভালবার ও ৪ রাউন্ড গুলি বের করে দেয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিতে অস্ত্রসহ পোজ দেয়া ছবি পায় গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিজভী জানায়, তার সহযোগী আমির হোসেনের কাছে আরও অস্ত্র আছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হাজিপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার মো: মুন্নার বাড়ির একটি পরিত্যাক্ত ঘর থেকে আমির হোসেন, মুন্না ও আ: রশিদ মিয়া নামের তিন জনকে আটক করে। এসময় আমির হোসেনের কোমর হতে ১ টি পিস্তল ও ২ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। মুন্নার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরিত্যাক্ত ঘরের মাটি খুড়ে কাপড় দিয়ে প্যাচানো আরও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতারকৃত অস্ত্র ব্যবসায়ীরা নরসিংদী শহরে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনের জন্য অস্ত্র ভাড়া ও বিক্রি করে থাকে। রিজভীর বিরুদ্ধে ধর্ষন সহ একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় লোকজনকে অস্ত্র দেখিয়ে টাকা পয়সা সহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নিত। যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করতোনা ভুক্তভোগীরা। এই কারনে তারা আরও সাহস পেয়ে বড় ধরনের অপরাধ ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র বহনের অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় অস্ত্র আইনে দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক(তদন্ত) এ.বি.এম রাশিদুল বারিকে এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারকৃত অস্ত্র গুলি বিভিন্ন দেশের তৈরী। এই অস্ত্র গুলির জোগান দাতাদের চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া অপরাধী চক্রটির দখলে থাকা অন্যান্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হাসিবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শফিউর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, নরষিংদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোর্শেদ শাহরিয়ার, সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মানিক সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
#
তৌহিদুর রহমান,নরসিংদী
১০/১০/১৬ ইং